বৃহস্পতিবার, ১০ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৬শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, সকাল ৮:২৬

‘ভয়াবহ ভূমিকম্প’ আতঙ্ক ফেসবুকে, যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা

 

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশে আগামী ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ৫ দশমিক ৫ থেকে ৬ দশমিক ৮ মাত্রার ‘ভয়াবহ ভূমিকম্প’ হবে বলে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরের দিকে ‘আর্থকোয়াক নিউজ এভরিডে’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে এই তথ্য ছাড়ানো হয়। এর পরই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন দেশবাসী।

যদিও এমন তথ্যকে উড়িয়ে দিচ্ছেন দুর্যোগ বিশেষজ্ঞরা। বলছেন, ভূমিকম্প হওয়ার আগে ঝড় বা জলোচ্ছ্বাসের মতো পূর্বাভাস দেয়া যায় না। তাই এ বিষয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন ও ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জিল্লুর রহমান বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) সময় সংবাদকে বলেন,

বাংলাদেশে আমরা দুর্যোগ, ভূমিকম্প নিয়ে কাজ করি। এমন কোনো তথ্য আমরা জানলাম না, অন্যরা কীভাবে জানল। এটি সম্পূর্ণ গুজব।


তিনি বলেন, পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেয়ার মতো প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হয়নি। ঝড়-বৃষ্টি বা জলোচ্ছ্বাসের যেমন আগে থেকে পূর্বাভাস দেয়া যায়; সেটা দিন, তারিখ, সময় ধরে ভূমিকম্পের বিষয়ে দেয়া যায় না। যেমনটা ফেসবুকে দেয়া হয়েছে। তবে একটি ভূমিকম্প হওয়ার পর পরবর্তী কয়েক বছরের সময়সীমার মধ্যে ভূমিকম্পের সম্ভাবনা হিসাব করা যায়।’ তাই এ বিষয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন এই দুর্যোগ বিশেষজ্ঞ।


যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ অনুসারে, একটি ভূমিকম্পের পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় জরুরি: এটি কোথায় ঘটবে, কখন ঘটবে এবং কত বড় আকারের হবে। সংস্থাটি বলছে, এখন পর্যন্ত কেউই নিশ্চিতভাবে এটি আগে বলতে পারে না।



ইতালির রোমের সেপিয়েঞ্জা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-বিজ্ঞানের এবং যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ার পেন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্রিস ম্যারোন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেন,

যখন আমরা পরীক্ষাগারে ভূমিকম্পের পরীক্ষা চালাই তখন আমরা এই সব ব্যর্থতা দেখি, যেখানে প্রথমে কিছু ফাটল এবং কিছু ত্রুটি দেখা যায়। কিন্তু প্রকৃতিতে অনেক অনিশ্চয়তা থাকায় আমরা প্রায়ই বড় ভূমিকম্প হতে যাচ্ছে এমন কোনো ইঙ্গিত পাই না।


ঢাকা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ?
 

অল্প সময়ের ব্যবধানে বাংলাদেশে মোট তিনটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এর মধ্যে রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে টাঙ্গাইলে উৎপত্তি হওয়া ওই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৪ দশমিক ২। গত ১৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ এবং ময়মনসিংহে ভূমিকম্পের এপিসেন্টার দেখা গেছে। যার সবই ঢাকার খুব কাছের এলাকা।

যদিও বাংলাদেশের পূর্ব ও উত্তর পাশকে ভূমিকম্পের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে ধরা হয়। বিশেষ করে সিলেট এবং চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে খুবই সক্রিয় ভূমিকম্প বেল্ট রয়েছে। যেসব ফল্টে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার মতো শক্তি জমা রয়েছে। ফলে যেকোনো মুহূর্তে বাংলাদেশের আশপাশে বড় মানের ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর এমন হলে ঢাকার জন্য বড় বিপর্যয়ের কারণ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
 


এ ছাড়া সাম্প্রতিক অনেকগুলো ভূমিকম্পের মূল কেন্দ্র ছিল পূর্ব দিকে মিয়ানমার অথবা ভারতের মিজোরাম, মনিপুর এবং উত্তরে আসাম, নেপাল কিংবা ভুটানে।

গত মাসেও দুটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছিল যেগুলোর উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেট অঞ্চলের সীমান্ত এলাকায়। দুই বছরে অন্তত ২৫ বার ভূমিকম্পে কেঁপেছে এ জনপদ।

এ ছাড়া চলতি বছরের মে মাসেই ৪ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল যার উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার দোহার থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে। এই ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ভূপৃষ্ঠের খুব কাছাকাছি থাকায় তখন উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন গবেষকরা।
 

আর ঢাকার ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর জন্য ঢাকাকে নিয়ে এত উদ্বেগ বলে জানালেন ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জিল্লুর রহমান। সময় সংবাদকে তিনি বলেন,

দেশের উত্তর এবং পূর্বাঞ্চল ভূমিকম্পে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। দক্ষিণাঞ্চলে খুব একটা ঝুঁকি নেই। সে হিসেবে ঢাকাও খুব বড় ঝুঁকিপূর্ণ শহর না। কিন্তু ঢাকার ভবনগুলো ভালোভাবে করা হয়নি। দুর্বল এসব ভবন মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হলেই ধসে পড়বে।


তার মতে, ‘দেশের উত্তর এবং পূর্বাঞ্চলে ভূমিকম্প হলে যেভাবে মাটির কম্পন অনুভূত হবে, ঢাকার ক্ষেত্রে তেমনটা হবে না। এখানে অনেক কম কম্পন হবে। জাপান, ক্যালিফোর্নিয়ার মতো ঢাকা অতটা ঝুঁকিপূর্ণ নয়। কিন্তু ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় বেশি ক্ষতি হবে, হতাহতের হার বেশি হবে।’


এই দুর্যোগ বিশেষজ্ঞ হতাশা প্রকাশ করে বলেন, বহুবার বলা হয়েছে ভবনগুলো সঠিকভাবে তৈরি করতে। কিন্তু কেউ কারো কথা শুনছে না। এতে মাঝারি মাত্রায় ভূমিকম্প হলেও আতঙ্কিত হতে হয়।
Facebook
Twitter
LinkedIn
WhatsApp